বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপি (বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল) বর্তমানে বেশ কিছু গুরুতর দুর্বলতার মুখোমুখি। ভবিষ্যতে যদি বিএনপি ক্ষমতায় আসে, তাহলে এই দুর্বলতাগুলো দেশ ও দলের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে। এই বিশ্লেষণে বিএনপির কিছু গুরুত্বপূর্ণ দুর্বলতাকে তুলে ধরা হলো।
১. তরুণদের সম্পৃক্ততা ও ছাত্র রাজনীতি
বিএনপির তরুণদের সক্রিয়ভাবে দলে অন্তর্ভুক্তির কোনো কার্যকরী উদ্যোগ নেই। ছাত্রদল একসময় শক্তিশালী হলেও এখন তা দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় ছাত্র সংগঠন নয়। নতুন প্রজন্মের কাছে বিএনপির আকর্ষণ অনেক কমে গেছে, যা ভবিষ্যতে দলের জন্য বড় সমস্যা হয়ে উঠতে পারে।
২. নিজস্ব মিডিয়ার অভাব
বিএনপির নিজস্ব কোনো শক্তিশালী মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম নেই। তাদের দলীয় সংবাদপত্র বা মিডিয়া আউটলেট না থাকায় দলীয় বার্তা ও আদর্শ প্রচারে ঘাটতি রয়েছে। বর্তমান রাজনৈতিক বাস্তবতায় মিডিয়ার ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে বিএনপি অনেক পিছিয়ে আছে।
৩. বুদ্ধিজীবী ও রাজনৈতিক প্রশিক্ষণের অভাব
বিএনপির নিজস্ব কোনো শক্তিশালী বুদ্ধিজীবী গোষ্ঠী নেই, যারা নীতি নির্ধারণ ও আদর্শিক নেতৃত্ব দিতে পারে। যেসব বুদ্ধিজীবী আছেন, তাদের অনেকের রাজনৈতিক প্রশিক্ষণ নেই, ফলে তারা কার্যকরভাবে দলের নীতিনির্ধারণ ও কৌশল প্রণয়নে ব্যর্থ।
৪. ন্যারেটিভ নির্মাণে দুর্বলতা
বিএনপি এখনো মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে নিজেদের শক্ত অবস্থান তৈরি করতে পারেনি। আওয়ামী লীগের তুলনায় তারা মুক্তিযুদ্ধের বয়ান নির্মাণে অনেক পিছিয়ে রয়েছে, ফলে তারা রাজনৈতিকভাবে একটি দুর্বল অবস্থানে রয়েছে।
৫. অনলাইন উপস্থিতির অভাব
বর্তমান সময়ে সামাজিক মাধ্যম রাজনৈতিক লড়াইয়ের গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র। কিন্তু বিএনপির অনলাইন প্রেজেন্স অনেক দুর্বল। তারা ডিজিটাল প্রচারণায় আওয়ামী লীগের তুলনায় পিছিয়ে আছে, যা বর্তমান তরুণ সমাজের কাছে তাদের বার্তা পৌঁছানোর ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টি করছে।
৬. নেতৃত্বের কেন্দ্রীকরণ ও নিয়ন্ত্রণ দুর্বলতা
বিএনপির নেতৃত্ব এককেন্দ্রিক নয়, বরং অনেকগুলো ক্ষমতার কেন্দ্র বিদ্যমান। এতে দলীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও বাস্তবায়নে সমস্যা দেখা দেয়। অভ্যন্তরীণ বিভক্তি ও নিয়ন্ত্রণের দুর্বলতা কর্মীদের মধ্যে হতাশা তৈরি করছে।
৭. আন্তর্জাতিক মিত্রের অভাব
আওয়ামী লীগের যেমন আন্তর্জাতিক মিত্র রয়েছে, বিএনপির তেমন কোনো শক্তিশালী বৈদেশিক সমর্থন নেই। কূটনৈতিক ক্ষেত্রে তারা দুর্বল অবস্থানে রয়েছে, যা তাদের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি ও সহায়তা পাওয়ার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে।
৮. দীর্ঘমেয়াদি রাজনৈতিক পরিকল্পনার অভাব
বিএনপির রাজনৈতিক পরিকল্পনা স্বল্পমেয়াদি, যেখানে ভবিষ্যতের জন্য সুস্পষ্ট কোনো রোডম্যাপ নেই। বিশ্ব রাজনীতি পরিবর্তন হচ্ছে, কিন্তু বিএনপি সেই পরিবর্তনের সাথে খাপ খাওয়ানোর মতো কোনো কৌশল নির্ধারণ করতে পারেনি।
৯. তরুণ নেতৃত্বের সংকট
বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্ব বয়সে প্রবীণ, যেখানে নতুন প্রজন্মের কোনো উদ্যমী নেতৃত্ব দৃশ্যমান নয়। তরুণ নেতৃত্বের অভাবের কারণে দলের ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।
১০. আদর্শিক ভিত্তির দুর্বলতা
বিএনপি এখনো তার মূল রাজনৈতিক আদর্শকে স্পষ্টভাবে সংজ্ঞায়িত করতে পারেনি। দলীয় ইতিহাস ও আদর্শের ভিত্তি শক্তিশালী না হলে রাজনৈতিক দল হিসেবে ভবিষ্যতে তারা জনগণের সমর্থন অর্জনে ব্যর্থ হতে পারে।
বিএনপির টিকে থাকার জন্য এবং একটি কার্যকর রাজনৈতিক শক্তি হয়ে ওঠার জন্য এই দুর্বলতাগুলো কাটিয়ে ওঠা জরুরি। তরুণদের সম্পৃক্ত করা, মিডিয়া শক্তিশালী করা, ন্যারেটিভ নির্মাণে মনোযোগ দেওয়া, আধুনিক রাজনৈতিক কৌশল গ্রহণ করা এবং আন্তর্জাতিক সমর্থন অর্জন করার দিকে মনোযোগ দেওয়া উচিত। অন্যথায়, ভবিষ্যতে বিএনপি নেতৃত্বে এলেও এই দুর্বলতাগুলো তাদের ও দেশের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে।
তথ্যসুত্রঃ পিনাকী ভট্টাচার্য